রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার একটি বাসা থেকে অর্ধশতাধিক অবৈধ ওয়াকিটকি সেট এবং যন্ত্রাংশ উদ্ধার করেছে র‍্যাব-৩ এর একটি দল। এ সময় অভিযুক্ত একজনকে আটক করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২ আগস্ট) র‍্যাব-৩ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বীনা রানী দাস এ কথা জানান।

তিনি জানান, সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-৩ জানতে পারে যে, রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় দেশের প্রচলিত আইন অমান্য করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফা লাভের আশায় অবৈধভাবে অপরাধীদের কাছে কালো রঙের ওয়াকিটকি সেট এবং আনুষঙ্গিক যন্ত্রাংশ দীর্ঘদিন যাবৎ বিক্রয় করে আসছে। কিন্তু বিটিআরসির নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিরা কালো রঙের ওয়াকিটকি সেট ব্যবহার করা দণ্ডনীয় অপরাধ।

এরই ধারাবাহিকতায় ১ আগস্ট রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি ভবনে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে অবৈধভাবে ওয়াকিটকি সেট এবং যন্ত্রাংশ নিজ হেফাজতে মজুদ রেখে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রয়কারী রাকিবুল ইসলাম (২৩) আটক করা হয়েছে। এ সময় ৬৮টি ওয়াকিটকি সেট, ওয়াকিটকি সেটের ব্যাটারি ১৫টি, চার্জার ৫২টি, ওয়াকিটকি সেটের হেডফোন ৫৩টি এবং মোবাইলফোন ০২টি উদ্ধার করা হয়।

আটক ব্যক্তিদের বরাতে বীনা রানী জানান, সে একজন ঠিকাদার হিসেবে বৈধ লাইসেন্স দিয়ে অবৈধভাবে বেতার যন্ত্র ওয়াকিটকি সেট নিজেদের হেফাজতে রেখে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রয় করে আসছে। কিন্তু তার কাছ থেকে উদ্ধারকৃত এসব ওয়াকিটকি এবং যন্ত্রাংশ ব্যবহার সংক্রান্ত লাইসেন্স ও কারিগরি গ্রহণযোগ্যতা সংক্রান্ত সনদ বা কোনো ধরনের বৈধ কাগজপত্র সে দেখাতে পারেনি। তার কাছ থেকে উদ্ধারকৃত এসব ওয়াকিটকি সেটের ফ্রিকোয়েন্সি ২৪৫-২৪৬ মেগাহার্জ। এসব ওয়াকিটকি ব্যবহার করে রিপিটার ছাড়া আধা কিলোমিটার পর্যন্ত যোগাযোগ করা সম্ভব। এছাড়া বহুতল ভবনের মধ্যে উপরতলা থেকে নীচতলায় যোগাযোগ করা সম্ভব। এসব ওয়াকিটকির দাম পাঁচ হাজার হতে পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত। ব্যাটারির চার্জ ধারণের ক্ষমতা অনুযায়ী ওয়াকিটকির দামের তারতম্য হয়ে থাকে। এছাড়া সে অপরাধীদের কাছে ওয়াকিটকি সেট বিক্রয় করেছে কি না এই বিষয়ে কোনো সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি।

বীনা রানী বলেন, দেশের সাধারণ জনগণ ওয়াকিটকি বহনকারী একজন ব্যক্তিকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ওয়াকিটকি সেট ব্যবহার করে অপরাধীরা ভূয়া ডিবি, র‌্যাব সদস্য, ডিজিএফআই সদস্য, এনএসআই সদস্য এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়সহ মারাত্মক অপরাধ সংগঠিত করে আসছে। এতে করে একদিকে যেমন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে, অন্যদিকে প্রকৃত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর যখন সাদা পোশাকে দায়িত্বপালনের প্রয়োজন হয় তখন জনসাধারণ তাদেরকে ভূয়া আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ভেবে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। এছাড়া ওয়াকিটকির মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করে অপরাধ সংগঠন করলে পরবর্তীতে অপরাধী শনাক্তকরণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হবে। যা সার্বিক নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। তাই বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।