অন্যের সাহায্যে সব সময় ঝাঁপিয়ে পড়তেন সাংবাদিক ও ফ্রিল্যান্সার মাসুদ রানা। কেউ কোনো প্রয়োজনে ডাক দিলেই চলে আসতেন রানা। পরোপকারী মাসুদ রানা পরোপকারে গিয়ে রওনা হয়েছেন অন্তিম যাত্রায়।
নগরীর একটি রেস্টুরেন্টের মালিক মাসুদ রানার স্ত্রী মালা রাখাইন। খুব ভোরে উঠেই সেই প্রতিষ্ঠানের দেখভালের জন্য বের হতেন। স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য স্বামীর কাছে আবদার করেছিলেন রেস্টুরেন্ট করে দেওয়ার জন্য। ফলে নিত্যদিনের কাজের অংশ ছিল সেগুলো দেখাশুনার।
কিন্তু আজ মালা রাখাইন খুব ভোরে উঠে আর রেস্টুরেন্টে যাননি। গাড়ি নিয়ে শরীয়তপুরের জাজিরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়েছেন স্বামী মাসুদ রানার লাশ আনতে। বিকাল সোয়া ৩টার দিকে বরিশালের আগৈলঝাড়ার বাশাইল নিজ গ্রামে পৌছায় মাসুদ রানার মৃতদেহ। অন্যের সাহায্য করতে গিয়েই মৃত্যুর হয়েছে মাসুদ রানার। মৃতদেহ পৌঁছার পর আর্তনাদে ভারি হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। পরিবার পরিজন, বন্ধু, প্রতিবেশীরা বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন। তারা মেনে নিতে পারছে না মাসুদ রানার মৃত্যু।
মাসুদ রানার স্বজন মো. বাপ্পি বলেন, এলাকা থেকে বরিশালে কেউ গেলেই কিভাবে কি করবেন, কি আপ্যায়ন করবেন তা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। কোনো সাহায্যের জন্য বললে কোনো কিছু না ভেবেই করতেন। নিজের জন্য যা করেনি তার থেকে বহুগুণ অন্যের জন্য করেছেন মাসুদ ভাই।
বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাওয়া অ্যাম্বুলেন্সের ৬ জনই নিহত হয়েছেন ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা লেগে। শরীয়তপুরে ভোররাতে ঘটনাটি ঘটে। নিহত ওই ছয়জনের মধ্যে মাসুদ রানাও একজন। তিনি অসুস্থ নূরজাহান বেগম ও তার মেয়ে লুৎফুন্নাহার লিমার সঙ্গে একই অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় যাচ্ছিলেন।
ওই ঘটনায় নিহত নূরজাহান বেগমের স্বজন ইয়াসিন মল্লিক বলেন, নূরজাহান বেগম আমার ভাবি। আমার ভাই লতিফ মল্লিক আমেরিকা প্রবাসী। এই ঘরে তার একটি মেয়ে লুৎফুন্নাহার লিমা। সেও দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। এছাড়া মারা যাওয়া ফজলে রাব্বি হলো আমার মামাতো ভাইয়ের ছেলে। সাংবাদিক মাসুদ রানা লুৎফুন্নাহার লিমার শিক্ষক ছিলেন।
সাংবাদিক মুশফিকুর রহমান বলেন, মাসুদ রানা অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন। করোনার সময়ে তিনি অসহায় মানুষের জন্য সারাক্ষণ কাজ করেছেন। আমরা একসঙ্গে কাজ করতাম। তিনি অসহায়, দরিদ্রদের সর্বাত্মক সহায়তা করেছেন। এভাবে তার চলে যাওয়া মানতে খুব কষ্ট হচ্ছে।
সাংবাদিক নূরুল আমিন রাসেল বলেন, মাসুদ রানা সবসময় অপরের উপকার করতে পছন্দ করতেন। তার শেষ যাত্রাও হলো অপরের উপকার করতে গিয়ে। এমন পরোপকারী মানুষ আমরা আর পাব না।
জানা গেছে, মাসুদ রানা বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের বাশাইলের বাসিন্দা। তবে বরিশাল নগরীর গোড়াচাঁদ দাস রোড এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছোট। তিনি দৈনিক নবচেতনা পত্রিকার বরিশাল ব্যুরো প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন। সোবাহান মৃধা ও কহিনুর বেগমের ছোট ছেলে ছিলেন মাসুদ রানা।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার ভোররাতে জাজিরায় থেমে থাকা ট্রাকের পেছনের দিক থেকে সজোরে ধাক্কা দেয় রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি। এতে চালক ও সহযোগীসহ মোট ৬ জন নিহত হন।